সাম্প্রতিক প্রেক্ষিত ::::: এপ্রিল – ’১২

মুসলমান আজ

কোন পথে?

মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন

 

বর্তমান যুগের মুসলমান মেয়েরা রাস্তা-ঘাটে যেভাবে চলাফেরা করে, তা দেখে মনে হয় –  এরা যেন কোন বিধর্মী ঘরের সন্তান। এদের মধ্যে লাজ-লজ্জা দেখা যায় না। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “লজ্জা ঈমানের একটা অঙ্গ।”

একজন মুসলমান মেয়ে কিভাবে রাস্তা-ঘাটে চলবে, কী ধরনের পোশাক পরিধান করবে, কিভাবে তাদের জীবন পরিচালনা করবে – এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা নারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোমরা নিজেদের ঘরে অবস্থান করো এবং পূর্বতন জাহিলী যুগের মত সেজে-গুজে নিজেদেরকে প্রদর্শন করো না।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত : ৩৩)

আজকাল অনেক মুসলমান ঘরের মেয়েদের দেখা যায়, তারা পাতলা ও টাইটফিটিং পোশাক পরে সেজে-গুজে রাস্তায় বের হয়। ফলে বখাটে ছেলেরা তাদের পিছু নেয়, উত্ত্যক্ত করে। এদের হাতে অনেক সময় মেয়েদের মান-ইজ্জত পর্যন্ত হারাতে হয়। আবার ঘটনার জেরে অনেকের জীবনও দিতে হয়। তেমনি অনেক মেয়েকে দেখা যায় – তারা পথে চলতে মাথায় কোন কাপড় বা ওড়না ব্যবহার করে না। আর গায়েও শর্ট টাইপের জামা পরে। অথচ মেয়েদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা পর্দা করা ফরজ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে সূরাহ নূরের ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে এবং সূরাহ নিসার ২৩ নং আয়াতে এ সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে।

আজ গ্রাম-গঞ্জে শহর-বন্দরে, দোকান-পাঠে, বাসা-বাড়ীতে টিভির পর্দায় ডিস এ্যান্ট্রিনার সাহায্যে এবং ভিসিডিতে  বিদেশ থেকে আমদানী করা যে সমস্ত অশ্লীল ছবি, নাচ আর গান চালানো হচ্ছে, এর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের গুনাহ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরূপ অবস্থা চলতে থাকলে, সমাজ যিনা-ব্যভিচারে ভরপুর হয়ে যাবে। আর তাতে সমাজ থেকে আল্লাহর রহমত উঠে যাবে এবং এদেশে আল্লাহর গজব নেমে আসবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পাক কালামে বলেন – “মানুষের হস্তার্জিত কর্মফলের দরুণ পানিতে ও স্থলে বালা-মুসীবত ছড়িয়ে পড়ে। যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের মন্দ কাজের ফল কিয়দাংশ উপভোগ করান, যাতে তারা সঠিক পথে ফিরে আসে।” (সূরাহ রুম, আয়াত : ৪১)

বিভিন্ন সময়ে আমাদের প্রতি যে সমস্ত বালা-মুসীবত যথা অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অতিবন্যা, ভূমিকম্প, শিলাবৃষ্টি, জলোচ্ছাস ইত্যাদি গজব আকারে আসে, এটা আমাদেরই কর্মফল বা গুনাহের পরিণতি। এ সকল বালা-মুসীবতের হাত থেকে রক্ষা  পেতে হলে, আমাদেরকে অবশ্যই এসব শয়তানী কর্মকাণ্ড তথা টিভি-ভিসিডির অশ্লীল ও নগ্ন ছবি এবং যাবতীয় পাপাচার দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আজ মুসলমানদের ঘরে ছেলে-মেয়েদের জন্ম দিবস, খাতনা অনুষ্ঠান, বিবাহের অনুষ্ঠান ইত্যাদি পালন করা হচ্ছে বিজাতীয় স্টাইলে। পূর্বকালে হিন্দু সমাজের ছেলে-মেয়েদের বিবাহ অনুষ্ঠানে যেভাবে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিবাহ দেয়া হতো, বর্তমানে মুসলমানের ছেলে-মেয়েদেরকেও সেইভাবে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিবাহ দেয়া হচ্ছে। আজ বিবাহ অনুষ্ঠানে গায়ে হলুদ দেয়ার কুপ্রথা চালু হয়ে গেছে। বরের বাড়ী থেকে কয়েকজন মহিলা হলুদ কাপড় পরে কন্যার বাড়ীতে গিয়ে কন্যার গায়ে হলুদ মাখায় আর নেচে নেচে গান গেয়ে যায়। পরের দিন কন্যার প—গ থেকে কয়েকজন মহিলা বরের বাড়ীতে গিয়ে বরকে অনুরূপভাবে সাজিয়ে আসে। আবার জন্ম দিনে কেক কেটে এবং খাতনা অনুষ্ঠানে গরু-মহিষ জবেহ করে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে দাওয়াত করে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ধুমধামে অনুষ্ঠান করা হয়। এটাও সম্পূর্ণ নাজায়িয কাজ। মুসলমানদের ঘরে এসব হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যারা ইচ্ছা করে যে, মুসলমানের মাঝে নির্লজ্জ কাজের প্রসার হোক, তাদের জন্য পৃথিবীতেও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে এবং আখিরাতেও। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।” (সূরাহ নূর, আয়াত : ১৯)

হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের পর কা‘বাঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম ৩৬০টি মূর্তি ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে কুরআনের এই বাণী উচ্চারণ করেছিলেন – “সত্য এসেছে, বাতিল অপসারিত হয়েছে। নিশ্চয় বাতিলের ধ্বংস অনিবার্য।” (আল-কুরআন) অথচ আজ মুসলমান দেশের রাজপথে দেয়ালে দেয়ালে প্রতিকৃতি-ভাস্কর্য নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। বাসা-বাড়ীতে শোভা বর্ধনের জন্য জীব-জন্তুর ছবি, মূর্তি-পুতুল ইত্যাদি শোকেসের মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী অপসংস্কৃতি।

আমরা যদি দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তি কামনা করি, তাহলে নিজেদেরকে প্রকৃত মুসলমানরূপে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য বর্ণিত নাজায়িয কার্যকলাপ থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। আসুন, আমরা তাওবা করে নিজেদেরকে শুধরে নিই এবং কুরআন ও হাদীস  মতে আমাদের জীবন গড়ে তুলে মুসলমানিত্বের দাবী পূরণ করি।

Related posts

Leave a Comment